logo

জামালপুরে ‘পাড়ায় সমাধান ক্যাম্প’: জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংলাপ, উন্নয়নের নতুন অধ্যায়

জামালপুর (পূর্ব বর্ধমান), ২৫ আগস্ট ২০২৫
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অভিনব উদ্যোগ ‘পাড়ায় সমাধান’ ক্রমশই রাজ্যজুড়ে এক বিশেষ আন্দোলনের রূপ নিচ্ছে। আজ পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর ব্লকে এই কর্মসূচির আওতায় আয়োজন করা হয়েছিল এক বিশেষ ক্যাম্প। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং সাধারণ মানুষ—সবাই মিলে এই ক্যাম্পকে সফল করে তোলেন।

ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয় আবুইঝাটি–২ এবং জোতশ্রীরাম অঞ্চলের মুক্তকেশী বিদ্যালয় ও জোতদক্ষিণ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। সকাল থেকেই এলাকাবাসীর ভিড় জমতে শুরু করে। প্রত্যেকের হাতে নিজেদের দাবি, সমস্যার তালিকা, আর মনে আশার আলো—সরকার ও জনপ্রতিনিধির কাছে সরাসরি তা জানানোর সুযোগ তাঁরা পাচ্ছেন।

🔹 জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় উপস্থিতি

এই ক্যাম্পের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয় জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় অংশগ্রহণ।

স্থানীয় বিধায়ক অলক কুমার মাজি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী পূর্ণিমা মালিক, সহসভাপতি ভূতনাথ মালিক, ভারপ্রাপ্ত বিডিও রাহুল বিশ্বাস, তৃণমূল ব্লক সভাপতি ও পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মেহেমুদ খান ক্যাম্পে অংশ নেন।

এছাড়াও ছিলেন দুই অঞ্চলের প্রধান আরিফা বেগম ও ঝর্না দাস, উপ–প্রধান শ্যামল চ্যাটার্জী, অঞ্চল সভাপতি রমেন্দ্রনাথ কোনার ও তপন দে।

তাঁদের উপস্থিতিতে সাধারণ মানুষ একদিকে যেমন উৎসাহিত হয়েছেন, অন্যদিকে আশ্বস্তও হয়েছেন যে তাঁদের সমস্যা গুরুত্ব সহকারে শোনা হবে।

🔹 জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ

ক্যাম্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল সরকারের প্রকল্প সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এখনো যেসব পরিবার নানা সরকারি প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত, তাঁদের জন্য এ যেন নতুন দিগন্ত।

মানুষ নিজের বুথ পর্যায়ে কোন উন্নয়ন প্রয়োজন তা লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

কেউ রাস্তা মেরামতের দাবি তুলেছেন, কেউ স্কুল ও আঙনওয়াড়ির অবকাঠামো উন্নতির কথা বলেছেন।

গ্রামীণ মহিলারা পানীয় জলের সমস্যার কথা জানিয়েছেন।

যুবসমাজ কর্মসংস্থান ও খেলার মাঠের দাবিও উত্থাপন করেছেন।


সব দাবি কর্মকর্তারা নথিবদ্ধ করেন এবং ডিজিটালভাবে রেকর্ড করেন। এর ফলে ভবিষ্যতে কাজের গতি ও স্বচ্ছতা দুই-ই নিশ্চিত হবে।

🔹 মেহেমুদ খানের বক্তব্য

তৃণমূল ব্লক সভাপতি ও পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মেহেমুদ খান বলেন—
“মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণ মানুষের জন্য এই অসাধারণ ব্যবস্থা করেছেন। এখন মানুষ নিজেরাই তাঁদের বুথে কী কী উন্নয়ন দরকার তা জানাচ্ছেন। প্রতিটি বুথের জন্য ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ থাকবে এবং সেই অর্থ ব্যবহার করে জনগণের দাবি অনুযায়ী কাজ করা হবে। এই উদ্যোগ প্রকৃত গণতন্ত্রের প্রতিফলন।”

তাঁর বক্তব্যে ক্যাম্পে উপস্থিত গ্রামবাসীরা আশ্বস্ত হন যে, তাঁদের দাবি সত্যিই গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হচ্ছে।

🔹 বিধায়ক অলক কুমার মাজির মন্তব্য

বিধায়ক অলক কুমার মাজি বলেন—
“মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা করেন তা যুগান্তকারী হয়ে ওঠে। পাড়ায় সমাধান সাধারণ মানুষকে সরাসরি সরকারের সঙ্গে যুক্ত করছে। এটি শুধু পশ্চিমবঙ্গের জন্য নয়, আগামী দিনে অন্য রাজ্যগুলির জন্যও একটি মডেল হয়ে উঠবে।”

তিনি আরও বলেন, এই কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামীণ পরিকাঠামোয় যে উন্নয়নের ধারা তৈরি হচ্ছে, তা রাজ্যের সামগ্রিক অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে।

🔹 গ্রামবাসীদের প্রতিক্রিয়া
ক্যাম্পে সাধারণ মানুষ তাঁদের অনুভূতি প্রকাশ করেন—

এক কৃষক বলেন, বহু বছর ধরে নালা সংস্কারের দাবি কেউ শোনেনি, আজ সেই দাবি সরাসরি আধিকারিকদের কানে পৌঁছেছে।

মহিলারা বলেন, তাঁদের এলাকার পানীয় জলের সমস্যা যদি সমাধান হয় তবে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন গ্রামের শিশুরা।

এক যুবক জানান, গ্রামের ছেলেমেয়েদের খেলার জন্য আলাদা মাঠের ব্যবস্থা করলে শরীরচর্চা ও মানসিক বিকাশে তা সহায়ক হবে।


এমন সরাসরি আলোচনার সুযোগ আগে কখনো পাননি বলেই জানিয়েছেন অনেকে।

🔹 স্বচ্ছ উন্নয়নের দিকে পদক্ষেপ

ক্যাম্পে উত্থাপিত প্রতিটি দাবি ডিজিটাল আকারে রেকর্ড করা হয়েছে। এতে একদিকে যেমন ভবিষ্যতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে দ্রুত কাজও সম্পন্ন হবে।

প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, প্রতিটি বুথের জন্য বরাদ্দ ১০ লক্ষ টাকা শুধুমাত্র সেই এলাকার মানুষের দাবির ভিত্তিতেই খরচ করা হবে।

🔹 বাংলার উন্নয়ন মডেল

রাজ্য সরকারের দাবি, পাড়ায় সমাধান–এর এই প্রকল্প শুধু উন্নয়নমূলক কাজ নয়, বরং প্রশাসন ও জনগণের মধ্যে আস্থার সেতুবন্ধন তৈরি করছে। এই মডেল গোটা দেশের কাছে এক অনন্য উদাহরণ হতে চলেছে।

✨ উপসংহার

জামালপুরে অনুষ্ঠিত এই ক্যাম্প প্রমাণ করল— গণতন্ত্র তখনই শক্তিশালী হয় যখন সরকার জনগণের কাছে পৌঁছে তাঁদের দাবি সরাসরি শোনে। পাড়ায় সমাধান সাধারণ মানুষের জীবনকে সহজ করছে, তাঁদের সমস্যার সমাধান করছে এবং উন্নয়নের নতুন দিশা দেখাচ্ছে।
গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত কোণেও মানুষ এখন আশা করছেন— তাঁদের কণ্ঠস্বর নথিবদ্ধ হচ্ছে এবং অচিরেই বাস্তবে রূপ পাবে। পশ্চিমবঙ্গের এই উদ্যোগই ভবিষ্যতে অন্য রাজ্যের জন্য অনুকরণীয় মডেল হতে পারে।

19
2192 views