logo

"সম্পর্ক"

প্রবন্ধ: সম্পর্ক,( নিঃসঙ্গতা ও জীবনের আসল কষ্ট )

কলমে: আসফাক আলি খান (লালটু)

মানুষের জীবনে সম্পর্ক এক বিরাট আশ্রয়। অথচ সেই সম্পর্কই যখন শীতল হয়, যখন আর একে অপরের উপস্থিতি অনুভব করা যায় না, তখন সেই সম্পর্কের ছায়ায় বেঁচে থাকাটাই হয়ে দাঁড়ায় সবচেয়ে বড় যন্ত্রণার কারণ।
সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া যতটা না কষ্টদায়ক, তারচেয়ে বেশি কষ্ট হয় ভাঙা সম্পর্ককে টেনে নিয়ে চলার ভান করতে। মুখে হাসি, মনে বিষ — এ এক নিঃশব্দ যন্ত্রণা, যা প্রতিদিন ভেতরে-ভেতরে ক্ষয় করে দেয় মানুষকে।

অনেকেই বলে, ভালোবাসা মানেই ত্যাগ। কিন্তু এই ত্যাগের ধারণাটিই যেন একতরফা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সবাই ভালোবাসতে চায়, কেউ ভালোবাসা দিতে চায় না।
সবাই চাইতে জানে, কিন্তু দিতে ক’জন জানে? হাজারো চাহিদার ভিড়ে মানুষ ভুলে যায়, অন্যজনেরও আছে অনুভব, যন্ত্রণার সীমা, ভাঙা আত্মার খণ্ডাংশ।

একাকীত্ব কেবল নিঃসঙ্গ থাকার নাম নয়। প্রকৃত একাকীত্ব হলো — কাছের মানুষদের মাঝেই একা হয়ে যাওয়া। যারা থাকার কথা, তারাই যদি মানসিকভাবে না থাকে, তখন সম্পর্ক থাকে শুধু সামাজিক রূপে, হৃদয়ের সংযোগ থাকে না।
এই বিচ্ছিন্নতা চিৎকার করে উঠে — কিন্তু সেই চিৎকার কেবল নিঃশব্দে কাঁদে, বাহিরের কেউ তা শুনতে পায় না।

এই সমাজে হাসিমুখের পেছনের কষ্ট কেউ বোঝে না। মানুষ ভাবে — যে হাসছে, সে সুখী।
কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। অনেকেই এমন এক মুখোশ পরে থাকে, যার নিচে লুকিয়ে থাকে অসীম বেদনা। এই বেদনাকে কেউ দেখে না, কারণ সবাই ব্যস্ত নিজের দুঃখ নিয়েই।
কেউ থামে না আরেকজনের কান্না বুঝতে। তাই তো কেউ কেউ হাসিমুখে তামাশা হয়ে যায় — সবার আনন্দের উপকরণ, অথচ নিজের কষ্টের বোঝা একা টেনে নিয়ে যায়।

সবচেয়ে বড় কষ্ট মৃত্যুতে নয়। মৃত্যু চূড়ান্ত একটি যাত্রা। কিন্তু জীবনের প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্তে এই ভাঙা আত্মা নিয়ে বেঁচে থাকা — সেটাই আসল কষ্ট।
মৃত্যু একটা মুক্তি, অথচ বেঁচে থাকা এক অসীম দায়িত্ব, যেখানে অনুভূতি চাপা পড়ে, হাসি অভিনয়ে পরিণত হয়, সম্পর্ক এক বিষাক্ত রূপ ধারণ করে।

এভাবেই মানুষের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পর্কগুলো — যখন অনুভূতির জায়গা থেকে সরে যায় সামাজিক রীতির খাঁচায়, তখন মানুষ আর মানুষ থাকে না। সে হয়ে ওঠে শুধু অস্তিত্বের ভারে চলা এক ছায়া — বেঁচে থাকে, কিন্তু বেঁচে থাকার মানে হারিয়ে ফেলে।

25
1258 views