logo

আসানসোল রেল স্টেশন থেকে ২৪ জন নাবালক উদ্ধার: মানব পাচার চক্রের বিরুদ্ধে আরপিএফ-জিআরপির কড়া পদক্ষেপ

আসানসোল, ২৩মে : আসানসোল রেল স্টেশনে ফের বড়সড় মানব পাচার চক্রের পর্দাফাঁস হলো। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে দু'দফায় মোট ২৪ জন নাবালককে পাচারকারীদের কবল থেকে উদ্ধার করেছে রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স (আরপিএফ) এবং গভর্নমেন্ট রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি)। ২১ মে, মঙ্গলবার বিকেলে জশিডি-তাম্বারাম সাপ্তাহিক সুপারফাস্ট ট্রেন থেকে ১৩ জন নাবালককে উদ্ধার করা হয়, যা নিয়ে গত এক সপ্তাহে উদ্ধার হওয়া নাবালকের সংখ্যা দাঁড়াল ২৪-এ।

ঘটনার বিবরণ:
২১ মে, বিকেল ৪টা নাগাদ জশিডি-তাম্বারাম সাপ্তাহিক সুপারফাস্ট ট্রেনটি আসানসোলে পৌঁছাতেই আরপিএফ তৎপর হয়ে ওঠে। গোপন সূত্রে খবর ছিল, বিহারের বিভিন্ন এলাকা থেকে কম বয়সী ছেলে-মেয়েদের অর্থের লোভ দেখিয়ে ভিন রাজ্যে পাচার করা হচ্ছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে আরপিএফ এবং জিআরপি যৌথভাবে ট্রেনটির প্রতিটি কামরায় তল্লাশি শুরু করে। তল্লাশির সময় ট্রেনের চারটি জেনারেল কামরায় কয়েকজন অভিভাবকহীন কম বয়সী যাত্রীকে দেখতে পান আধিকারিকরা।

তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখা যায়, আধার কার্ড অনুযায়ী ১৩ জন যাত্রীই ১৮ বছরের নিচে। আরপিএফ-এর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ১১ জন এজেন্ট এই ১৩ জন নাবালককে চেন্নাইয়ে নিয়ে যাচ্ছিল অতিরিক্ত আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে। এরপরই তাদের ট্রেন থেকে নামিয়ে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেখান থেকে তাদের বীরভূমের একটি হোমে পাঠানো হয়েছে। উদ্ধার হওয়া নাবালকদের পাচারকারী এজেন্টদের আদালতে তোলা হয়েছে।

এক সপ্তাহে ২৪ জন উদ্ধার:
উল্লেখযোগ্যভাবে, এর ঠিক এক সপ্তাহ আগে, ১৪ মে একই ভাবে আরপিএফ আসানসোল স্টেশন থেকে আরও ১১ জন নাবালককে উদ্ধার করেছিল। সেদিন মোট ৩২ জনকে হেফাজতে নেওয়া হলেও, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পাঁচজন পাচারকারীকে চিহ্নিত করে আদালতে পেশ করা হয় এবং ১১ জন নাবালককে চেন্নাইয়ে পাচার হওয়ার হাত থেকে বাঁচানো হয়।

পাচারকারীদের কৌশল ও নাবালকদের দুর্দশা:
জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, পাচার হতে চলা এই নাবালকদের বাড়ি মূলত বিহারের জামুই, মুঙ্গের, বাঁকা এবং ঝাড়খণ্ডের দেওঘর, দুমকা ইত্যাদি এলাকায়। এদের পারিবারিক অবস্থা অত্যন্ত দরিদ্র। পাচারকারীরা এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে। চেন্নাইয়ে ভালো থাকা-খাওয়া এবং অতিরিক্ত আয়ের লোভ দেখিয়ে এই কম বয়সীদের ভিন রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে গিয়ে তাদের নির্দিষ্ট ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া হয়, যার বিনিময়ে এজেন্টরা মোটা অঙ্কের কমিশন পায়।

তবে, পাচারের শিকার এই নাবালকদের ভবিষ্যৎ জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এজেন্টরা একবার তাদের হস্তান্তর করার পর আর কোনো খোঁজ রাখে না। অনেককে দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয় এবং তাদের হাতে নামমাত্র টাকা ধরিয়ে দেওয়া হয়। কোনো কোনো ঠিকাদার মজুরি সরাসরি বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়, যার ফলে পরিবারের সদস্যরা কিছু টাকার মুখ দেখলেও, ভিন রাজ্যে এই নাবালকদের জীবন হয়ে ওঠে অনিশ্চিত ও কঠিন।

আরপিএফ ও জিআরপির অঙ্গীকার:
মানব পাচার রুখতে আরপিএফ এবং জিআরপি চূড়ান্ত সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এই ধরনের পাচার রোধে তারা কোমর বেঁধে নেমেছে এবং লাগাতার অভিযান চালাচ্ছে। তাদের এই তৎপরতায় মানব পাচার চক্রের বিরুদ্ধে বড়সড় আঘাত হানা সম্ভব হচ্ছে।
সংবাদাতা S.A.Islam

33
4734 views