logo

*বাবু, রক্ত দিব বটে কিন্তু ভাষাটো দিব নাই*

*বাবু, রক্ত দিব বটে কিন্তু ভাষাটো দিব নাই*
শ্রী সৌভিক চট্টোপাধ্যায়
সহকারী অধ্যাপক
ফার্মাসিউটিক্স বিভাগ
পাণ্ডবেশ্বর স্কুল অফ ফার্মাসি

প্রদর্শিত মানচিত্রটি অবিভক্ত মানভূমের । লাল বর্ডারের যে অংশ বাংলার বাইরে থাকতে বাধ্য হলো সেখানকার বাঙালী ও বাংলা ভাষার অবস্থা এখন কী সেই প্রশ্নের উত্তর বিশ্বমানবদের কাছ থেকে পাওয়া দুরূহ।

শহুরে এবং কলকাতা কেন্দ্রীক বাঙালিরা বাংলা ভাষার অধিকারের আন্দোলন বলতে শুধুমাত্র “২১ শে ফেব্রুয়ারি” বোঝে, তার সাথে উচ্চারিত হয় না মানভূঁইয়াদের ভাষা আন্দোলনের কথা। এমনকি পুরুলিয়ার যুবসমাজের অনেকে জানেনা তাদের মাটির লড়াইয়ের গল্প। সেই ঐতিহাসিক দিনের এক অতি সংক্ষিপ্ত আলেখ্য।

১৯৪৭-এ বিহার সরকার সেখানে সমস্ত সরকারি কাজে বাংলা সরিয়ে হিন্দি চাপানোর চেষ্টা করে, সরকারি স্কুল কলেজে বাংলা ভাষার অধিকার অগ্রাহ্য করে হিন্দি পড়া বাধ্যতামূলক করে। মুছে যেতে থাকে সরকারী বেসরকারী ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা। বাঙালি চাকুরীজীবিদের বিহারের নানা জেলায় স্থানান্তর করা হয়, বিহারের নানা জেলা থেকে হিন্দি চাকুরীজীবিদের নিয়ে এসে মানভূম দখলের ডাক দেয় বিহার সরকার। মানভূমের বাঙালী গর্জে ওঠে, মাতৃভাষার অধিকারের দাবিতে পুনরায় হিন্দি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামিল হয়‌। শুরু হয় বাঙালীর উপর চরম অত্যাচার। বাংলা ভাষা অধিকার আদায়ের মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়। হাজার হাজার বাঙালীকে জেলে ভরা হয়। তাও পারেনি।
সাংসদ ভজহরি মাহাতো এর লেখা টুসুগান
"শুন বিহারী ভাই/
তোরা রাইখ্যতে লারবি ডাং দেখাঁই/
বাংলাভাষার দাবিতে ভাই/
কোনো ভেদের কথা নাই/
এক ভারতে ভাইয়ে ভাইয়ে/
মাতৃভাষায় রাজ্য চাই।"

বিহার সরকারের হিন্দি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ে অবশেষে ১৯৫৬ সালে ১লা নভেম্বর মানভূমের এক অংশ নিয়ে সৃষ্টি হয় জেলা পুরুলিয়া, যা বাংলায় সংযুক্ত হয়। সেই গর্বের দিন হল পয়লা নভেম্বর।
অতুলচন্দ্র ঘোষ, ভজহরি মাহাতো, লাবণ্যপ্রভা দেবী, সমরেন্দ্র ওঝা, রাঘব কর্মকার সহ সমস্ত ভাষা আন্দোলনকারীদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের দিন। নতুন করে বাংলা ভাষা রক্ষার শপথ নেওয়ার দিন।
জয় বাংলা।

15
783 views